আর নিজেকে পরচর্চা করতে ভালোবাসার জন্য বকা দেবেন না! আসলে, আপনি কেবল 'জীবনের পাবলিক রিভিউ' দেখছেন
আপনিও কি একই রকম?
একদিকে আপনি মনে করেন 'পরচর্চা' একটি খারাপ অভ্যাস, অন্যদিকে আবার অনুপস্থিত কারও সম্পর্কে বন্ধুদের সাথে 'আলোচনা' না করে থাকতে পারেন না। আমাদের ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয়েছে যে, অন্যের পেছনে কথা বলা উচিত নয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তার প্রায় ৬৫% থেকে ৯০% বিষয়ই এমন লোকেদের নিয়ে হয়, যারা সে সময় উপস্থিত থাকে না।
এটা কি খুব বেশি স্ববিরোধী নয়? আমরা চাই না অন্য কেউ আমাদের নিয়ে পরচর্চা করুক, অথচ আমরা নিজেরাই ক্লান্তিহীনভাবে এই কাজটা করে যাই।
তাড়াতাড়ি নৈতিক নিন্দা জানাতে যাবেন না। যদি আমি আপনাকে বলি যে, এই ধরনের আচরণের মূল বিষয় আসলে রাতের খাবারে কী খাবেন তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে 'পাবলিক রিভিউ সিস্টেম' বা 'গুগল ম্যাপস' খুলে রিভিউ দেখা – তাহলে কী বলবেন?
আপনার সামাজিক বৃত্তেও 'ব্যবহারকারীর মন্তব্য' প্রয়োজন
একটু কল্পনা করুন, আপনি নিশ্চয়ই সম্পূর্ণ অপরিচিত কোনো রেস্টুরেন্টে হুট করে ঢুকে পড়েন না, তাই না? আপনি প্রথমে রিভিউগুলো দেখেন: এই রেস্টুরেন্টের বিশেষ পদ কী? তাদের সেবার মান কেমন? কেউ কি কোনো খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে?
সামাজিক মেলামেশায় আসলে আমরা একই কাজ করি। তথাকথিত 'পরচর্চা' অনেক সময় একটি বেসরকারি বা অপ্রাতিষ্ঠানিক 'বাস্তব মানুষের রেটিং সিস্টেম' হিসেবে কাজ করে।
বন্ধুদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আমরা আসলে চুপিসারে তথ্য সংগ্রহ করি:
- “ছোট ওয়াং খুব নির্ভরযোগ্য মানুষ, গতবার যখন আমি বিপদে পড়েছিলাম, সে দ্বিতীয়বার না ভেবেই সাহায্য করতে এসেছিল।” – এটি একটি পাঁচ-তারা ভালো রিভিউ, ভরসা করার মতো।
- “ছোট লি-এর সাথে কাজ করার সময় সাবধানে থাকবেন, সে সবসময় শেষ মুহূর্তে জিনিসপত্র জমা দেয়।” – এটি একটি তিন-তারা সতর্কবার্তা, সতর্কতার সাথে মোকাবিলা করতে হবে।
- “কখনোই ওই লোকটার সাথে টিমে থাকবেন না, সে সব কৃতিত্ব নিজের করে নেবে।” – এটি একটি এক-তারা খারাপ রিভিউ, তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই ভালো।
মনোবিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন যে, এটি প্রায় আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি। এমনকি ছোট বাচ্চারাও একে অপরকে 'খবর দেয়': “ওই ছেলেটার সাথে খেলো না, সে কখনোই খেলনা শেয়ার করে না।” এটি কোনো মন্দ উদ্দেশ্য নিয়ে অপবাদ দেওয়া নয়, বরং আত্মরক্ষা ও সামাজিক যাচাই-বাছাইয়ের একটি আদিম পদ্ধতি – আমরা নিশ্চিত করি যে কে আমাদের 'সেরা সহযোগী' হতে পারে, আর কে একজন সম্ভাব্য 'মন্দ সহযোগী'।
এই 'ব্যবহারকারীর মন্তব্য'গুলোর মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, জীবনের 'বন্ধুদের তালিকা'-তে কাকে যোগ করব।
কেন আমরা 'পর্যালোচিত হওয়া' অপছন্দ করি?
যেহেতু 'পরচর্চা' এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সামাজিক হাতিয়ার, তাহলে কেন এর এত বদনাম এবং কেন এটি আমাদের অপরাধবোধে ভোগায়?
উত্তরটা খুব সহজ: কারণ কেউ সেই রেস্টুরেন্ট হতে চায় না যাকে এক-তারা খারাপ রিভিউ দেওয়া হয়েছে।
যখন আমরা আলোচনার মূল বিষয় হয়ে উঠি, তখন আমরা আমাদের 'সুনামের' উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। আমাদের পরিচিতি আর আমরা নিজে ঠিক করি না, বরং অন্যের মুখে তা নির্ধারিত হয়। এ কারণেই আমরা ভয় পাই, কারণ আমরা ভালোভাবে জানি 'খারাপ মন্তব্য'-এর কতটা ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা আছে।
মন্তব্য নিষিদ্ধ করার চেয়ে 'নিজের অভিজ্ঞতা' অর্জন করা ভালো
সুতরাং, মূল বিষয় সম্পূর্ণভাবে 'পরচর্চা' নিষিদ্ধ করা নয়, বরং এই 'পর্যালোচনা'গুলোকে কীভাবে দেখা এবং ব্যবহার করা হয় – সেটাই আসল কথা। মন্দ উদ্দেশ্যপূর্ণ গুজবগুলো অনলাইনে ট্রলদের মতো, যাদের উদ্দেশ্য একটি দোকানকে ধ্বংস করা; আর শুভ ইচ্ছার সতর্কতাগুলো বন্ধুদের খারাপ অভিজ্ঞতা এড়াতে সাহায্য করে।
তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে: অন্যদের মন্তব্য শেষ পর্যন্ত কেবলই একটি তথ্য মাত্র।
অনেক ভুল বোঝাবুঝি এবং কুসংস্কার দ্বিতীয় হাতের তথ্যের স্তরে স্তরে ভুল ব্যাখ্যার কারণে সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে যখন আমরা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভিন্ন পটভূমির মানুষের মুখোমুখি হই, তখন কেবল 'শুনে' বিশ্বাস করা আরও বিপজ্জনক। ভাষার বাধা, সাংস্কৃতিক ভিন্নতা – সব মিলিয়ে একটি সাধারণ কথাকেও গুরুতর 'খারাপ মন্তব্য' হিসেবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে।
এইসব পক্ষপাতদুষ্ট 'পর্যালোচনা'-র উপর নির্ভর করার চেয়ে বরং নিজেকে 'নিজের অভিজ্ঞতা' অর্জনের সুযোগ দিন।
এ কারণেই সরাসরি যোগাযোগ এত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনি ভাষার বাধা অতিক্রম করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে সহজে কথা বলতে পারবেন, তখন অন্যের বলা কথার ওপর আপনার আর নির্ভর করতে হবে না। আপনি নিজেরাই অনুভব করতে পারবেন, বুঝতে পারবেন এবং আপনার নিজস্ব সবচেয়ে বাস্তবসম্মত প্রথম হাতের মূল্যায়ন তৈরি করতে পারবেন। Intent-এর মতো সরঞ্জামগুলো, যেখানে তাৎক্ষণিক অনুবাদ সুবিধা আছে, আপনাকে এই দেয়াল ভাঙতে সাহায্য করে, যাতে আপনি যে কারো সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেন।
পরের বার, যখন আপনি কারো সম্পর্কে 'পরচর্চা' শুনবেন, তখন একটু থেমেন।
মনে রাখবেন, একজন মানুষকে বোঝার সেরা উপায় কখনোই তার সম্পর্কে 'পর্যালোচনা' পড়া নয়, বরং তার সাথে সরাসরি বসে ভালোভাবে কথা বলা।
প্রকৃত সম্পর্ক একটি আন্তরিক কথোপকথন দিয়েই শুরু হয়।